উদ্ধারের পর থানা কম্পাউন্ডে অপহৃত পরিবারের ৯ সদস্য । সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক রাজধানীর সূত্রাপুরে জমি দখলের উদ্দেশ্যে এক পরিবারের নারী-শিশুসহ ৯ সদস্যকে অপহরণের প্রায় আট ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হৃষিকেশ দাশ লেনের ৯৫ নম্বর বাড়ি থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সূত্রাপুর থানার সেকেন্ডঅফিসার সাব-ইন্সপেক্টর ফরমান আলী জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়ির দরজার কড়া নেড়ে ডাকাডাকি শুরু করে। বাড়ির বাসিন্দারা দরজা খুললে ১০-১২ জনের একটি দল নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে হুড়মুড় করে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। সে সময় তাদের হাতে ছিল রিভলবার ও দেশীয় অস্ত্র। তারা ঘরে ঢুকে প্রথমে লুটপাট চালায়। সোনার গহনা, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নেওয়ার পর অস্ত্রের মুখে শিশু ও মহিলাসহ নয়জনের হাত বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। এরপর তাদের হৃষিকেশ দাশ লেনের ৬৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে নিয়ে আটকে রাখা হয়। অপহরণের খবর পেয়ে টহল পুলিশ তখনই অপহৃতদের উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি শুরু করে। এ সময় সন্দেহজনক ঘোরাফেরার কারণে ইসমাইল হোসেন বাবুল (৩২), আখতার হোসেন (২৭), নিজাম উদ্দিন সাগর (২৮) ও সোহাগ (২৪) নামে চারজনকে আটক করে। পুলিশ তাদের ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অপহরণের কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হৃষিকেশ দাশ লেনের জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে একটি দোকান থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করে পুলিশ। অপহৃতরা হলেন নিতাই দাস (৭০), শম্ভু (৫০), মহাবীর দাস (৪৫), কাজল রানী দাস (৪২), লক্ষ্মীশ্রী দাস (৪০), বিউটি দাস (১৮), সজল দাস (১৪), সুইটি রানী দাস (১২) ও স্বর্ণা রানী দাস (৮)।এলাকাবাসী জানান, আড়াই কাঠা জমির ওপর নির্মিত নিতাই দাসদের বাড়ি। এ বাড়িতে দু'শ' বছরের পুরনো একটি রাধাকৃষ্ণ মন্দিরও রয়েছে। বাড়ির পেছনে আনন্দধারা হাউজিং লিমিটেডের একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। তারা এ বাড়ির জমি কেনার চেষ্টা করে। কিন্তু নিতাই দাসরা বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হননি। এরপরই বাড়িটি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে আবাসন প্রকল্পের লোকজন। কিছুদিন আগে তারা একটি দলিল দেখিয়ে মন্দিরসহ বাড়ির জায়গা তাদের বলে দাবি করে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তাদের পক্ষ থেকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নানারকম চাপও দেওয়া হয়। এর জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে এলাকাবাসী মনে করেন। বাড়ির অধিবাসী ব্যবসায়ী নিতাই দাস জানান, তারা উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়ির মালিক। এ জমি অন্য কারও নয়। তিনি বলেন, আনন্দধারা নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে তাদের বাড়ি বিক্রির জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। এতে তারা রাজি হননি। এ কারণেই তাদের অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন নিতাই দাস। তিনি বলেন, আটক রাখার সময় অপহরণকারীরা একটি সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মচারী ও বাড়ির অধিবাসী শম্ভু জানান, তাদের ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। বিউটি দাস জানান, তিনি এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এ ঘটনার জন্য তিনি গতকালের ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে পারেননি।নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রতিবেশী জানান, সরকারি দলের নেতাকর্মীরাই এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত। যাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে তারাও আওয়ামী লীগেরই লোক। ডেভেলপার কর্তৃপক্ষের হয়ে তারা এ পরিবারটিকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তারাই অপহরণের ঘটনা ঘটায়। রাজধানীর ৮০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী গ্রেফতারকৃতদের তার দলের কর্মী বলে স্বীকার করেন। তবে তাদের দুষ্কর্মের সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাড়ি দখলকে কেন্দ্র করেই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে। অপহরণের নেপথ্যে হাউজিং কোম্পানির থাকার কথাও তিনি শুনছেন বলে স্বীকার করেন।